ভারতের বিদেশ সচিব শ্রিংলার সফরে উষ্ণতা বাড়ল ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের

অয়নাংশ মৈত্র | 22 August 2020
No image

sa74


মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথম কোন বিদেশ সফরে আকস্মিকভাবে গত ১৮ ইঅগস্ট মঙ্গলবার ঢাকায় এলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, বৈশ্বিকমহামারী, মহামারী পরবর্তী পর্যায়ে অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ এবং নিরাপত্তার বিষয় উত্থাপন করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রেরিত মৈত্রীর বার্তা।মহামারীতে পাশে থাকার আশ্বাস দেয় ভারত।

পরদিন বুধবার, শ্রিংলার আতিথেয়তায় একটি অত্যন্ত ঊষ্ণএবংবন্ধুত্বের আবহে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করেন বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন।করোনার প্রতিষেধকসহ একগুচ্ছ অত্যন্ত সময়োপযোগী বিষয়ে আলোচনা হয় দুই সচিবের।“বিশ্বের মোট প্রতিষেধক প্রায় ৬০শতাংশ উৎপাদন করে ভারত”,শ্রিংলা ঢাকায় এসে অবগত করেন।তিনি জানান, করোনার প্রতিষেধক-এর স্বীকৃতি পেলেই, দ্রুত গতিতে উৎপাদন করবে ভারত, যা বাংলাদেশের মত প্রতিবেশীদেরকে পাঠানো হবে।করোনার প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার ও প্রস্তুতকরণে সচেষ্ট ভারত হাত মিলিয়েছে বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে।

আগামী বছরে জানুয়ারি মাসে, অষ্টমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রবেশ করবে ভারত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের সহযোগিতার জন্য শ্রিংলাকে আবেদন করেন বাংলাদেশের বিদেশ সচিব।

হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টসসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতকে আর্থিক সহায়তা দেয় ভারত বিগত আট বছরে, ভারত শুধু মাত্র ঋণের সীমায় (লাইন অব ক্রেডিট) ৮বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশকে।এই সমস্ত কাজ গতি আনতে বিশেষ তৎপর হবে দু’দেশের প্রশাসন।ভারত-বাংলা সীমান্তে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী বি এস এফ এর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যু বন্ধ করতে,আগামী মাসে ঢাকায় বি এস এফ এবং বি জি বির ডি জির বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে এর ফলে সীমান্তে নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে, সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের মানবিক অধিকারের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যায়।

দুটি দেশের সুসম্পর্ক অটুট রাখতে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রীদের নিয়ে গঠন করা হচ্ছে যৌথ পরামর্শ মূলক কমিশন বা জে সি সি যার কর্মসূচী নিয়ে দ্রুত দিল্লী রওনা হবেন বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বাস্তু সংস্থান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয় দু’দেশের রাষ্ট্রদূতের।

মহামারী ছড়িয়ে পড়ার প্রাক-কালীন সময়ে, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুত সেদেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার।করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ঈদে দশটি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন উপহারের জন্যও মাসুদ বিন মোমেন ধন্যবাদ জানান শ্রিংলাকে।বিদেশ সচিবের পদে উন্নীত হবার আগে শ্রিংলা ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশী নাগরিকদের চিকিৎসার মত জরুরী বিষয়ে ভারতের ভিসা দেবার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য অনুরোধ করা হয় শ্রিংলাকে।আসামের ধুবরিতে পুলিশি হেফাজতে থাকা ২৫ জনবাংলাদেশী মৎস্যজীবীকে মুক্তি এবং তাবলীগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত দেশে ফেরানোর বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের এই বর্ষীয়ান কূটনীতিবিদ।চট্টগ্রাম ও মংলা নৌ-বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ব্যতীত প্রোটোকল অন ইন ল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড এন্ড ট্রানজিট চুক্তি ছিল এ আলাপের অন্যতম প্রধান বিষয়।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অন্য মাত্রা আনতে “এয়ার বাবল” পরিষেবার প্রস্তাব দেয় ভারত।সম্প্রতি মালদ্বীপের সঙ্গে এই ব্যবস্থা চালু করেছে ভারত।ভারত ও বাংলাদেশের যুব সমাজের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টিও আলোচিত হয় এ দিনের আলোচনায়।

ভারতের নাগরিক সংশোধনী বিল এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ নিয়ে,ভারতের উপর বিক্ষুব্ধ হয় বাংলাদেশ।তিস্তার পানি বণ্টন অমীমাংসিত থাকলে, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ পায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক অনুদান।চীনের সঙ্গে সীমান্তে সংঘাত, নেপালের সঙ্গে সীমানা নিয়ে বৈরিতা এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরভাষে সংলাপ ভারতের কাছে আশঙ্কার, উদ্বেগের এবং উৎকণ্ঠার।সর্বোপরি ভারতের সংবাদপত্রে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ দু-দেশের সম্পর্কে আঘাত হানে।মূলত সেই কারণেই বিদেশ সচিবের এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

মুজিব বর্ষের উৎযাপন এবং দু’দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনের অর্ধশতবর্ষ পূর্তি নিয়ে একাধিক প্রয়াস নিয়েছে ভারত।খুলনাতে একটি ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, মংলা এবং মিরসরাইতে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগে সহ নানা কর্মসূচী ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রীতে অন্য একমাত্রা আনবে বলে আশা করা যায়।

অয়নাংশ মৈত্র, সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ-এর জুনিয়র ফেলো এবং ভারতীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।

প্রকাশিত নিবন্ধের বক্তব্য সম্পূর্ণ লেখকের, এ বক্তব্য সি জি এস-এর নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। 

Comments