ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
17 April 2023ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। যখন আইনটির খসড়া করা হয়েছিল, তখন থেকেই বলা হয়েছিল, এটি ভয়াবহ রূপ নেবে। স্বাধীন মতপ্রকাশ সীমিত করবে। সাড়ে চার বছর পর তাই দেখা যাচ্ছে। ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে আইনটি।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: এখন কী করতে হবে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সিজিএসের উপদেষ্টা আলী রীয়াজ। তিনি অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের করণীয় কয়েকটি প্রস্তাব করেন আলী রীয়াজ। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পর্যবেক্ষক নিয়োগ, মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতিসহ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ, পুলিশ কত মামলায় সঠিক সময়ে প্রতিবেদন দিয়েছে তা প্রকাশ, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জামিন।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরে আইনটি নিয়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করলেও তা নিয়ে সরকার অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এ ছাড়া আইনটি সংশোধন করার ক্ষেত্রেও আলোচনা করতে হবে সরকারকে। অংশীজনেরা এই আইন নিয়ে যেসব আপত্তি তুলেছে, সেগুলো কি সরকার আলোচনায় যুক্ত করেছে? এখানে সরকারের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আইনটি বাতিল করতে হবে। নির্যাতনমূলক এই আইন মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিছু লেখার সময় চিন্তা করতে হয়, এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পড়বে কি না। ডিজিটাল মাধ্যমে নিরাপত্তা দিতে আইনের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু আইনের যে প্রয়োগ, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পাঁচ মাস কারাগারে ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এই আইনের প্রয়োগই অপপ্রয়োগ। এই আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
সিজিএস ২০২০ সাল থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গবেষণা করছে। সিজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১ হাজার ২৯৫টি মামলার সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা গেছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৪ জন এবং তার মধ্যে ১ হাজার ৩৭৮ জন আটক হয়েছিলেন। আটক ব্যক্তিদের অনেকে জামিনে মুক্ত হলেও অনেকেই বিচারাধীন অবস্থায় আটক আছেন।
News Courtesy: