সিজিএস-এর ওয়েবিনারে বিশ্লেষকরা, স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে
09 May 2021একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আয়োজিত এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বরেণ্য আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, নিজেদের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে বিশ্ব মেরুকরণে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।
গতকাল শনিবার ঢাকার বেসরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)’ আয়োজিত ‘মহামারীর ভূ-রাজনীতিঃ বাংলাদেশের চিত্রপট’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মূল বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফাং (এফইএস) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কলবিজ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন, নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’র সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ড. আসিফ সাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. শফিউল্লাহ।
সূচনা বক্তব্যে ফেলিক্স কোলবিৎজ বলেন, মহামারীর এই সময়টা মানুষের জীবনকে যেভাবে পাল্টে দিয়েছে সেভাবে পরিবর্তন এসেছে আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ চলমান করোনা মহামারীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহামারী বিশ্বকে প্রভাবিত করে যাচ্ছে যার ফলে পৃথিবীর নতুন একটি রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থান বিবেচনা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের প্রেক্ষাপট বোঝা যাবে বলে আলী রীয়াজ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকলেও চীনের সাথে বর্তমানে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুইটি জিনিস এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রথমটি হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয়টি হলো শাসনব্যবস্থা। এই দুইটি প্রেক্ষাপট ছাড়াও সরকার, ব্যবসা খাত ও বিরোধী শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চলক এখানে ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। আঞ্চলিক চলক হিসেবে তিনি ভারত এবং চীনের কথা বলেছেন এবং চীন সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের জন্য বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি জানান।
তিনি পাবলিক ডিসকোর্সের কথাও বলেন এবং দুইটি উপাদান উল্লেখ করেন পাবলিক ডিসকোর্সের জন্য- প্রথমত, ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে এবং দ্বিতীয়ত, ভূ-রাজনৈতিক আলোচনা দুইটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে হয় ভারত নয় চীন এবং এর কারণ হিসেবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিকে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলেন, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব মেরুকরণ দেখছে, যেখানে জাতিসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ব্যর্থ হচ্ছে। ভৌগলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সংকটপূর্ণ অবস্থানে আছে বলে তিনি মনে করেন।
ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন টিকা রাজনীতিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি মাত্র দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে বাংলাদেশ আজ টিকা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন একাধিক দেশের সাথে বাংলাদেশের সমন্বয় করা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন যেহেতু মিয়ানমারের সাথে চীনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে তাই মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে মহামারী পরবর্তী মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের কেমন সম্পর্ক হবে তা এখনই বলা যচ্ছে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. শফিউল্লাহ ভারত এবং চীন দুই দেশের সাথেই কিভাবে বাংলাদেশ সমান সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন বাংলাদেশ কখনো সব দেশের সাথে সম্পর্কের সমদূরত্ব বজায় রাখতে পারবে না। বরং সব দেশের সাথে সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়।
News Courtesy"