বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীর বাহাস
23 November 2021
গণতন্ত্র না উন্নয়ন, জাতীয় স্বার্থে কোনটি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত- এই বিতর্কে জড়িয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং বিগত বিএনপি সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান। গণতন্ত্র ও সুশাসন হরণের জন্য তারা একে অন্যের রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করেছেন।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন না থাকায় বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাস পান না উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি মজুদ অর্থ পাচার করা হয়েছে। গত ১০ বছরে কী পরিমাণ মুদ্রা পাচার হয়েছে, তার হিসাব বলছে না কেউ। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণে মাথাপিছু আয়সহ অন্যান্য সূচকের সঙ্গে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। না হলে কোনো অর্জন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না। বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিএনপি এখন গণতন্ত্রের কথা বলছে, অথচ বন্দুক অথবা বন্দুকধারীদের সহযোগিতায় তারা দল গঠন করেছে। গায়ের জোরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তবে সময় এখন আমাদের। রাজনৈতিক খেলায় আমাদের সঙ্গে পারবেন না।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া বিষয়ক এক সংলাপে এই বিতর্কে জড়ান তারা। গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সংলাপ উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন। সঞ্চালনা করেন পিডব্লিউসি বাংলাদেশের প্রতিনিধি মামুন রশীদ।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় ড. আবদুল মঈন খানের বক্তব্যে। সংলাপে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাবে গত ১৫ বছরে দেশে কতগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, জোরপূর্বক তুলে নিয়ে কত জনকে নিখোঁজ করে দেওয়া হয়েছে, কত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে- তার কোনো ইয়ত্তা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা হয়েছে। গণতন্ত্র ও সুশাসন না থাকার এই অরাজক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাস পাননি উদ্যোক্তারা।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, কী পরিমাণ কাগুজে মুদ্রা ছাপা করা হয়েছে, তা নিয়ে আছে অস্বচ্ছতা। ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনুকূল করা হয়নি। সাধারণ মোটা ভাত-কাপড়ের দাম বাড়ছেই। মূল্যস্ম্ফীতি গত ১০ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে।
ড. আবদুল মঈন খানের বক্তব্যের পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে ওঠেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বেশিরভাগ অভিযোগের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র না উন্নয়ন আগে এ বিতর্কের জবাব হচ্ছে- জনগণের জন্য যা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, তাই করছে সরকার।
এম এ মান্নান বলেন, 'গণতন্ত্র অবশ্যই এখানে আছে। আপনারা হয়তো ভোটকেন্দ্রে আসেন না। গণতন্ত্র চাইলে চর্চা করতে হয়। মাঠের বাইরে থেকে খেলা হয় না। আপনারা মাঠের বাইরে চলে গেছেন।'
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানে একটি রাজনৈতিক দলই কেবল নয়, এটি বাংলাদেশের বিকাশের একটি আন্দোলন। ড. আবদুল মঈন খানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, 'রাজনৈতিক খেলায় আমাদের সঙ্গে পারবেন না। এই খেলায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী ফার্স্ট ফার্স্ট ফার্স্ট। সময় এখন আমাদের।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করে এম এ মান্নান বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা একটা অদ্ভুত বিষয়। কোত্থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এসে প্রেসিডেন্ট বনে যায়। এরপর একে ওকে ধরে বলা হয় জয়েন করেন।'
সাবেক ও বর্তমান দুই পরিকল্পনামন্ত্রীর বাহাসের আগে সংলাপে জাতীয় পার্টি সরকারের শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলামও একই বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার ও স্থিতিশীলতা না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।
জাতীয় পার্টির সাবেক এই মহাসচিব বলেন, দুর্নীতি এখন মহামারি আকার নিয়েছে। কর ফাঁকি, শুল্ক্কফাঁকিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি। সংস্কারের জন্য কেবল কিছু নীতি নিলেই কেবল হবে না, মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমলাদের দক্ষতা এখন অত্যন্ত নিচু মানের। এ কারণে সরকারের কিছু কিছু ভালো পদক্ষেপ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের পরিচালক মার্সা টেম্বনও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন সংলাপে। তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশানের চিত্র এবং নিউইয়র্কের চিত্রের মধ্যে খুব বেশি তফাত নেই। তবে রংপুর, ময়মনসিংহ কিংবা খুলনার চিত্র ঠিক উল্টো। এই বৈষম্য হ্রাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
বেসরকারি খাতকে এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি। এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তুলনামূলক সহজ সংস্কার কাজগুলোই করা হয়েছে বিগত দিনে।
দিনব্যাপী সংলাপে পৃথক তিনটি অধিবেশনে, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়িক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
News Courtesy: