তুর্কি রাষ্ট্রদূতকে নির্বাচন নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন, যে জবাব দিলেন

16 November 2022
No image

ঢাকায় নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। নির্বাচন সব পক্ষের অংশগ্রহণে হওয়া প্রয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন এবং সব দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। 

‘তবে সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। আশা করি, সরকার দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। আগামী নির্বাচনে যে দলই জয়লাভ করুক, তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। তুরস্ক চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।’

বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এই কূটনীতিক। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। 

অনুষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন এমনকি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যে হঠাৎ তৈরি শীতল সম্পর্কসহ নানা দিক কূটনীতিকের বক্তব্য এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে উঠে আসে। 

তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা বলেন, বিরোধী দল অংশ না নিলে বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগ হারাবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। 

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে। তুরস্ক সরকার বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে। তুরস্কও বাংলাদেশের মতো শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করছে। প্রচুর সংখ্যক সিরীয় শরণার্থী তুরস্কে আছে। এরপরও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সমর্থন করছে তুরস্ক। 

অনুষ্ঠানে নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান আমি বুঝি। আমি মনে করি, আমাকে আপনাদের চিন্তা না জানিয়ে আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। বাংলাদেশে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সুযোগ আছে। তবে দুঃখজনকভাবে এটি এখন হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তা স্থিতিশীলতা থাকার জন্যই হয়েছে। আমরা এটি স্বীকার করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে বাংলাদেশে। আমার দেশসহ অনেক দেশে এই সমস্যা আছে। সরকার যদি মতপ্রকাশের ব্যবস্থা করে, তাহলে যে টেনশনটি আছে সেটি অনেক কম হবে। 

ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো চলছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ না নেওয়া খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা বলেন, তুরস্ক জ্বালানি সম্পদের দেশ নয়। বরং আমরা একটি ট্রানজিট দেশ। রাশিয়ান ফেডারেশন জানিয়েছে যে, তারা ইউরোপে তেল ও গ্যাস রপ্তানির জন্য তুরস্ককে একটি জ্বালানি কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চায়। বাংলাদেশের জন্য তা যদি সম্ভব হয় ও কিছু সূত্র পাওয়া যায় এবং আমাদেরকে একটি ট্রানজিট দেশ হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হয়, তাহলে তা করতে আমরা যথেষ্ট খুশি হব।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে যা হয়েছে সেটা আসলে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কিছু নয়, পুলিশের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত। তবে এ সংক্রান্ত সহযোগিতা বাড়াতে চাই। তিনি বলেন, যেহেতু এটা ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ তাই এখানে বলা যায় যে, আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, রকেট লঞ্চার, ড্রোনসহ কিছু পণ্য বাংলাদেশ কিনেছে। এটি শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। 

তিনি বলেন, তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে এবং সেটি এখানে বানানো হচ্ছে। তিনি নেভি ও কোস্টগার্ডের জন্য নতুন প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, আমরা পেট্রোলবোট তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করেছি। এটি গ্রহণ করা হলে নয়টি পেট্রোলবোট খুলনা ও চিটাগাংয়ে তৈরি করা হবে। 

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা-সংক্রান্ত সমঝোতা আছে। আর্থিক সহায়তার অধীনে বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে পারবে।

প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস। এফইএস এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করেছে। 

এ ছাড়া এতে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তাওহিদ হোসাইন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ম শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম, ফায়য়াজুল হক রাজু, ড. জামাল উদ্দীন, ড সরদার নাঈম, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম প্রমুখ।

News Courtesy:

https://www.jugantor.com/national/others/616389/%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8

Comments