শক্তিশালী ও উদার গণতন্ত্রের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে
30 May 2021
গণতন্ত্রে নেতৃত্ব মানে সম্মিলিত নেতৃত্ব, যা সব পর্যায়ে দরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শক্তিশালী ও উদার গণতন্ত্রের জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আজ শনিবার ‘অতিমারি–পরবর্তী বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। উদার গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার কথাও আলোচনায় আসে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, উদার গণতন্ত্রের জন্য দায়িত্বশীল বিরোধী দলের প্রয়োজন আছে। বিরোধী দল দায়িত্বের বেলায় নেই। উদার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে প্রত্যকের নিজ নিজ জায়গা থেকে সত্যিকারভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশে অর্জন ও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি তুলে ধরে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, অর্জনের বিষয়গুলো অবশ্যই আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। আলোচনায় নেতিবাচক দিকগুলো এসেছে। আলোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এই উদার গণতন্ত্রের আলোচনার মধ্যে সরকার বা দেশের যে অগ্রগতি ও উন্নয়ন—এ বিষয়গুলো নিয়ে আসা হলে কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা চিহ্নিত করা যাবে এবং সঠিকভাবে দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নেওয়া যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ কথা বলা কঠিন। উদার গণতন্ত্রে জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে থাকার কথা, যা অনুপস্থিত। সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে কয়েক বছর ধরে এটি অনুপস্থিত। জনগণের ভোটাধিকার নেই। নির্বাহী বিভাগ থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ধারার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দেশে এখন গণতন্ত্র আছে। কিন্তু নাগরিক ও ভোটাররা তাঁদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। বেশির ভাগ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের মাধ্যমে চলছে। “পাবলিক সার্ভেন্ট”কে প্রায়ই রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো কথা বলতে দেখা যায়।
সরকারের সমালোচনাও অনেক সময় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গণ্য করে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নজরদারির মাধ্যমে খর্ব করতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত কথোপকথনের তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে, যা হতাশাজনক। জনগণের অর্থে এসব ডিভাইস কেনা হচ্ছে আমার-আপনার কথোপকথন রেকর্ড করার জন্য। জনগণের টাকা এ কাজে ব্যবহার করা যায় কি না, এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলেও উত্তর মিলছে না। তিনি আরও বলেন, দমনমূলক আইন ও বিধানগুলো বাতিল করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করতে নির্বাচনপ্রক্রিয়া স্বচ্ছের পাশাপাশি জগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র আছে, যা যথাযথভাবে কাজ করছে না। মনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে, কিন্তু কার্যক্রমে গণতান্ত্রিক চেতনা নেই। দুর্নীতি ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। দেশে কার্যকর বিরোধী দলও নেই। সিভিল সোসাইটি দেখি না, দেখি পলিটিক্যাল সোসাইটি। তারাও বিভক্ত—কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি আবার কেউবা জামায়াত সমর্থক। গণতন্ত্রে নেতৃত্ব একটি বিষয়। নেতৃত্ব বলতে সম্মিলিত নেতৃত্ব, যা সব পর্যায়ে দরকার।’
ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ আলোচক হিসেবে অংশ নেন। ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসীন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ।
News Courtesy: