আকবর আলি খান: ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়
20 December 2021মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতের অবদান থাকলেও রাষ্ট্র হিসেবে তার প্রতি বাংলাদেশ 'চিরকৃতজ্ঞ' থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান বলেছেন, 'চিরকৃতজ্ঞ' থাকার কথাটি কিন্তু ১৯৭১ সালে শোনা না, এ কথাটা সম্প্রতি উঠেছে। এ রকম চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ পৃথিবীর কোথাও নেই।
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
আকবর আলি খান বলেন, 'এটা ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব না। এটা জাতির সঙ্গে জাতির বন্ধুত্ব।
হরাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব তখনই হবে যখন আমাদের স্বার্থ অভিন্ন হবে। আর যদি আমাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে সংঘাত থাকে, তাহলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতা বোধ কোনো দিনই হবে না।'
তিনি বলেন, '১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তোমরা স্বাধীনভাবে বাঁচো সেটাই আমরা চাই। তারা কখনো এ কথা কল্পনা করেননি যে বাংলাদেশ কারও কাছে চিরপদানত হয়ে থাকবে। এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়।'
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চার মূলনীতির মধ্যে জাতীয়তাবাদ 'চূড়ান্তভাবে' অর্জিত হয়েছে মন্তব্য করে আকবর আলি খান আরও বলেন, 'বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ চূড়ান্তভাবে অর্জিত হয়েছে, এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। চিন্তার কারণ হলো গণতন্ত্র নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বিশ্বাস করি উদারনৈতিক গণতন্ত্রে। এই গণতন্ত্রে শুধু নির্বাচন হলেই চলবে না, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, সেখানে নাগরিক সমাজের ভূমিকা থাকতে হবে, আইনের শাসন থাকতে হবে-এ ধরনের বিষয়গুলো বাংলাদেশে এখনো দুর্বল।'
সৈনিক, কৃষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ একটি জনযুদ্ধ ছিল উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সমাজতন্ত্রকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজতন্ত্রের যে স্বপ্ন রয়েছে, তা হলো মানুষে মানুষে বিভেদ কমানো। কিন্তু দেশে মানুষে মানুষে বিভেদ বেড়ে চলেছে। যেসব হিসাব আমাদের কাছে আছে তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৬৫ ভাগ দেশে বাংলাদেশের চেয়ে আয়ের বৈষম্য কম। বাংলাদেশে যে ধরনের বৈষম্য রয়েছে, এ ধরনের বৈষম্য মাত্র ৩৩ শতাংশ দেশে রয়েছে। এ বৈষম্য বেড়েছে গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে।'
আয় বৈষম্যের পেছনে দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রবাহ ছাড়াও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করে সাবেক এ সচিব বলেন, 'বৈষম্যের একটি কারণ হচ্ছে, দেশে প্রচন্ড দুর্নীতি চলছে, এই দুর্নীতির ফলে কালোটাকা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের এখানে বৈষম্য বেড়েই চলেছে।'
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনাকে ৫০ বছরে বাংলাদেশের 'অকল্পনীয়' অর্জন হিসেবে বর্ণনা করে আকবর আলি খান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। আজকে ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, এটা অকল্পনীয় অর্জন। আমরা যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো দেখি, তাহলে অবশ্যই আমাদের গর্ব করার কারণ রয়েছে। তবে দারিদ্র্য শুধু বাংলাদেশেই কমেনি, পৃথিবীর সব দেশেই কমেছে।'
সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ ইব্রাহিম বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সিজিএসের আয়োজনে বাংলাদেশের ৫০ বছর শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
News Courtesy:
https://www.jaijaidinbd.com/todays-paper/first-page/222366