জার্মানি-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ
29 March 2022জার্মানি-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, ৫০ বছরে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে দুই দেশকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-জার্মানির আরও অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছে। চীনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ জার্মানি থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারে। অপরদিকে বাংলাদেশ জার্মানির জন্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের একটি বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তৃতায় ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশ- এর আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ বলেন, ৫০ বছরে জার্মানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের উচিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কের পথ রেখার প্রতি নজর দেয়া।
বিভিন্ন সমস্যা একত্রে মোকাবিলার জন্য জার্মানি এবং বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী বন্ধুত্ব প্রয়োজন। এ সময় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পূর্ব জার্মানি, যেটি কিনা বর্তমানে জার্মানিরই অংশ, সেটি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। সেই শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি প্রাণবন্ত এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। জার্মানি এবং বাংলাদেশের মধ্যকার এই সম্পর্ক দু’দেশের নাগরিকদের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। মূল বক্তব্যে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, অভিবাসন বিষয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত সম্পর্ক ত্বরান্বিত হবে। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। বিশেষত, ভারত এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক সম্পর্ক এতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর জন্য বাংলাদেশ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের একটি বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামরিক যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবসময় চীনের উপর নির্ভরশীল। এদিকে চীন আবার মিয়ানমারের পক্ষ হয়ে কাজ করে আসছে। ফলে এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য জার্মানি চীনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ এবং জার্মানি দুইটি রাষ্ট্রেরই ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আসন্ন দিনগুলোতে বাংলাদেশ কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জার্মানি এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সব সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোতে জার্মানি সব সময় বাংলাদেশের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, এমপি বলেন, বাংলাদেশ এবং জার্মানির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক আমাদের কাছে সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে কূটনৈতিকভাবে এতটাই শক্তিশালী যে, এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে ভবিষ্যতে সুসম্পর্কের ধারা বজায় রাখার জন্য। সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-এর উপদেষ্টা নাসিম ফেরদৌস বলেন, উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানির উচিত বাংলাদেশকে আরও বেশি সহায়তা প্রদান করা। তিনি বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রতি জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষত নারীদেরকে ব্যবহারিক শিক্ষায় বেশি বেশি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশ এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করছে। বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কমিটি-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মুক্তাদির শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জীবপ্রযুক্তির উপর জোর দিয়ে বলেন, এই তিনটি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এবং জার্মানির সম্পর্ক ভিন্নমাত্রা অর্জন করতে পারবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও গবেষক রুবাইয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজন নারীদের উন্নয়ন। যদিও বাংলাদেশ জেন্ডার অসমতা কাটিয়ে উঠতে বেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে, তবুও বেশকিছু ক্ষেত্রে জার্মানি বা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি নূরজাহান বেগম মুক্তা, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সারওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, গার্মেন্ট শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর জিল্লুর রহমান এবং জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সরদার এ. নাঈম।
News Courtesy:
https://mzamin.com/article.php?mzamin=321610