‘জার্মানি আমাদের কৌশলগত অংশীদার হতে পারে’
29 March 2022জার্মানির সাথে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন না সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বন্ধু নাই। আমরা সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে অতি-মাত্রায় চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, যা আমাদের জন্য ভালো না। কেন না চীনকে মিয়ানমার তার ভূ-খণ্ডের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে এবং সেখান দিয়ে চীন পর্যন্ত জ্বালানি পরিবহনের দুইটি পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। আবার মিয়ানমারও চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। তাই এক্ষেত্রে আমাদের নতুন বন্ধু খোঁজা উচিত এবং তা জার্মানি হতে পারে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-জার্মান সম্পর্কের ৫০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ পাঠে সোমবার এমন মন্তব্য করেন। মূলপ্রবন্ধ পাঠ শেষে সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ পাঠে বলেন, ‘জার্মান এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল। উভয়ের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সন্তোষজনক এবং এক্ষেত্রে আমাদের কোনো বাণিজ্য ঘাটতি নেই। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের বাজারে আমরা জিএসপি (বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা) সুবিধা বলে সম্ভব হয়েছে। সামনে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তীর্ণ হব। আমরা চাইলে তখনও তাদের বাজারে এই জিএসপি সুবিধা পাওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা পেতে হলে আইনের শাসন, কথা বলার স্বাধীনতা এসব বিষয়ে আরো উন্নতি করতে হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘৫০ বছর আগে শুরুতে জার্মানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল অনুদান নির্ভর। গত ৯০ এর দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাণিজ্যিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়। ৫০ বছর পর এখন এই সম্পর্ক রাজনৈতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু আমাদের এই সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। সামরিক খাতের সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমরা এখন অতিমাত্রায় চীনের ওপর নির্ভরশীল, যা ভাঙতে হবে। আমাদের এখন কৌশলক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। জার্মানি থেকে আমরা সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এই ইস্যুতে নতুন সম্পর্ক গড়া সম্ভব।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত অখিম ট্রোস্টার সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বলেন, ‘রাজনীতিবিদের কারণেই এই দেশটা অনেক উন্নতি করেছে। তারা সঠিক নীতি বাস্তবায়ন করেছে বলেই বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে উন্নতি করতে পেরেছে। এখন রাজনীতিবিদদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। যাতে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়তে চাই। যে কারণে জলবায়ুজনিত ক্ষতি বা নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় এই খাতে জার্মানি ১০টি দেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়তে চায়, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত সপ্তাহে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি প্যানেল আলোচনায় বলেন, ‘আমাদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে। এই বছর প্রথমবারের মত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে রাজনৈতিক বৈঠক শুরু হচ্ছে। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাণিজ্য এবং কানেটিভিটিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ ডেস্কের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুর্শিদ কাজী প্যানেল আলোচনায় বলেন, ‘ব্রেক্সিটের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে প্রাধাণ্য দেওয়া হত। কিন্তু ব্রেক্সিটের পর তা জার্মানের দিকে চলে গেছে। জার্মান ও ইউরোপী ইউনিয়নের সঙ্গে সামনের দিনে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর হবে। শিগগির তাদের সাথে আমাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হবে। আর জার্মানির সাথে আমাদের সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ের দিকেই যাচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে দেশটি থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ শুরু করেছি এবং কিছু সামরিক সরঞ্জাম তাদের থেকে কেনাও হয়েছে।’
News Courtesy:
https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=175608