সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ না করা ভালো
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলে আসছে। কিন্তু ফৌজদারি কার্যবিধিতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ অছে, নির্বাচন কমিশন তার কিছু কর্মকর্তাকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে পারবে। এ বিষয়ে আরপিওতে কিছু বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর সদস্যকে দেওয়া যায় না। কাজেই সেনাবাহিনী এলো কিন্তু কিছু করল না—এ রকম কথা বলে আমার মনে হয় সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ না করাই ভালো। প্রশ্ন তুলতে হবে আপনাকে—কেন এভাবে সেনাবাহিনীকে ডাকা হলো।
রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-বিস মিলনায়তনে গতকাল বুধবার বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কথা বারবার আসছে। বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী আসার পরও কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। হওয়ার কথা ছিল কি?
ড. সাখাওয়াতের মতে, সেনাবাহিনী প্রতিটি ইলেকশনে আসে বা সামরিক বাহিনী ওই কাজটিই করে যে কাজটি তাদের করতে বলা হয়। তারা আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করে না। তাদের টার্মস অব রেফারেন্স বা টিওআর’-এ যা বলা আছে তার বাইরে কেউ যায় না সাধারণত, শুধু যুদ্ধের সময় ছাড়া।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। সিজিএস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের সভাপতি ইজাজ আহমেদ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, ‘ভোট দেওয়া সবার নাগরিক অধিকার। কিন্তু সব পরিবহন বন্ধ থাকলে আমরা কিভাবে ভোট দেব। আজকের সমস্যা আগামীতে তরুণদের সামলাতে হবে। তাদের মধ্যেও বিভক্তি আছে। তারাও ভোট দেবে। আবার বাধাও দেবে। এই তরুণদের অনেকে রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। তরুণদের স্বাধীন চিন্তা থাকা প্রয়োজন।’
গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘সরকারের ওপর দোষারোপ না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তরুণরা ভোট দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত।’
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘গণতন্ত্র বলতে শুধু ভোট নয়। গণতন্ত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। আমি ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে থাকতে চাই না।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। আমলারা রাজনীতি ধ্বংস করেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা শক্তিহীন ও সম্পদহীন হওয়ায় নির্বাচনে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রার্থীদের ওপরও হামলা হচ্ছে।’
মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘তরুণ ভোটাররা শঙ্কিত। আস্থা ফেরাতে ইসির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভোটের দিন কেন এনালগ থাকবে? বৃদ্ধ-প্রতিবন্ধীরা কিভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবে?’
বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘যেখানে যার আধিপত্য সেখানে দুর্বলদের ওপর হামলা হয়। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব জনগণের ভয় দূর করা। একটু গণতন্ত্র চর্চায় জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন সাবেক সচিব সুনীল কান্তি বোস, যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাক হিলস স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভুইয়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ এজাজ কবির প্রমুখ।
News Courtesy: https://www.kalerkantho.com