ভোটারদের আস্থা অর্জনে পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ইসির
‘এখনও নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনকে ঘিরে হামলা চলছেই। প্রার্থীদের ওপর হচ্ছে, তাদের সমর্থকদের ওপরও হামলা হচ্ছে। নারী, সংখ্যালঘু, তরুণদের ওপরও হামলা হচ্ছে। এগুলোতে নির্বাচন কমিশনকে নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে।’ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিআইআইএস মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সেমিনারে একথা বলেন বক্তারা।
‘পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ইনক্লুসন : হোয়াই ইয়াং, ওম্যান অ্যান্ড মাইনোরিটি সুড ভোট ইন জেনারেল ইলেকশন’ শীর্ষক সেমিনারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার বয়স তো কম হয়নি, এর চেয়ে অব্যবস্থাপনার নির্বাচন আগে আর দেখিনি। নির্বাচন দেখেছি, কনডাক্ট করেছি। আবার সরাসরি কাজও করেছি। কিন্তু এ ধরনের অব্যবস্থাপনা আগে দেখিনি। শুধু তাই নয়- প্রার্থী বদল হচ্ছে, প্রার্থীর মার্কাও বদল হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এখন কি করবে? নির্বাচন স্থগিত করবে? রাতারাতি তারা ব্যালট পেপার করতে পারবে কিনা, আমি জানি না। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ মাইন যখন পড়ে তখন মেজরিটি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপরও পড়ে, মাইনোরিটির ওপরও পড়ে। নারীদের ওপরও পড়ে, তরুণদের ওপরও পড়ে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন এ পর্যায়ে যাবে সেটা আমাদের চিন্তাতেও ছিল না। সামনে বসা এম সাখাওয়াত হোসেনকে দেখিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন। কোন কোন গোয়েন্দা বাহিনী জড়িত আছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কতটুকু, ‘আইএসআই’ কতটুকু! এ ধরনের জিনিস তো, ’৫৪ থেকে অনেক নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু এ জাতীয় ঘটনা কি আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, আমলাদের নিয়ে আমার প্রশ্ন সব সময় এ কারণেই থাকে। তারা সময়ে শুধু ইয়েস মিনিস্টার, ইয়েস মিনিস্টারই বলেন না। তারা রাজনীতি ধ্বংস করেন। দেশের সম্পূর্ণ মনন শক্তিকে ধ্বংস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা ভেবেছিলাম সেনা মোতায়েনের পরে আক্রমণ ও সহিংসতা কমবে। লক্ষ্য করে দেখলাম আক্রমণ ও সহিংসতার তীব্রতা আরও বেড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তরুণরা সব ভয়কে জয় করতে পারবে। এটাই আমাদের আশাবাদের জায়গা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম বলেন, কিছু ভিডিও আমরা দেখেছি। অনেক ফাঁস হওয়া ফোন আলাপে দেখেছি। লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা দেখছি কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশে আসছে হুন্ডি হয়ে সারা দেশে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। এসব নজরদারিতে আনতে হবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এখনও নির্বাচনের পরিবেশ কিন্তু সুষ্ঠু নয়। প্রার্থী, সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কিন্তু নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে পারে। সেটা আইনেই বলা আছে। তারা তা করছে না। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের ভয়-ডর দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের বিষয়টাও নিশ্চিত করতে হবে।
এবার আমরা দেখছি, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসতে পারছেন না। তাদের ভিসা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু কেন- সেটা পরিষ্কার করতে হবে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. রওনক জাহান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, ব্রত’র প্রধান নির্বাহী অফিসার শারমীন মুর্শিদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক আহরার আহমেদ, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইজাজ কবির, সঞ্জীব ডং, সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মুঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার আহসান কবির, বিটিআরসির সাবেক চেয়্যারম্যান সুনিল কান্তি বোস প্রমুখ। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইয়ং লিডারশিপ সেন্টারের সভাপতি ইজাজ আহমেদ।
News Courtesy: https://www.jugantor.com