নির্বাচনের মাঠ সুষ্ঠু করতে পারছে না ইসি
দেশের ভোটাররা এখন ভয়ে আছেন। নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে তরুণ, সংখ্যালঘু, নারীদের ওপর হামলা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের ওপরও হামলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী নামার পর হামলা কমার সম্ভাবনা থাকলেও হয়নি। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারের উচিত জনগণের মধ্যে যে ভয় আছে, সেটা দূর করা। কিন্তু ইসির মধ্যে মতানৈক্য আছে। নির্বাচনের মাঠ সুষ্ঠু রাখার ক্ষমতা থাকলেও ইসি সেটা করতে পারছে না।
গতকাল সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘তরুণ-নারী এবং সংখ্যালঘুদের কেন ভোট দেওয়া উচিত?’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইয়ুুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ইজাজ আহমেদ। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলে কী হামলা বা নির্বাচনী মাঠের কোন পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল প্রশ্ন করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীকে যেভাবে কাজ করতে বলা হবে, তারা সেভাবে কাজ করবে। আরপিওতে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা করা হয়নি। নারী প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। সে কারণে নির্বাচনে নারী প্রার্থীরা এগিয়ে আসেন না। ইসি যদি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত তাহলে এ অবস্থা হতো না।
সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের বিষয়টি পুনরায় চিন্তা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া উচিত, না গেলে তার ভোটটি দেয়া হয়ে যেতে পারে। এ সময় প্রার্থিতা বাতিল, স্থগিতের বিষয়ে ইসির অব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার।
আইন অনুযায়ী ইসি অভিযোগ পাওয়ার জন্য কেন বসে থাকবে— এমন প্রশ্ন করে মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ইসিকে স্ব-উদ্যোগে নির্বাচনী হামলা মোকাবেলা করতে হবে। আগামী কয়েক দিন নির্বাচনী সহিংসতারোধে ইসিকে আইনগত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ভোটের রাজনীতির শিকার হয়ে সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করে। এটির দায়ভার রাষ্ট্রকে নিতে হবে। রামু হামলার ঘটনায় দায়ের করা ১৮টি মামলার একটিরও বিচার হয়নি। তরুণ সমাজের যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল সেটা পূরণ হয়নি। সে কারণে তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী চায়।
নির্বাচনী হামলা থামানোর কেউ নেই মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, দেশে তরুণ, সংখ্যালঘু, নারী, প্রার্থী সবাই ভয়ের মধ্যে আছে। ইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইসির নজরদারিত্বে (মতে) কোথাও কোনো বাধা নেই, পুলিশি হামলা হচ্ছে না।
যারা নৌকায় ভোট দেবে না তাদের কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশবাসী একটা পরিবর্তন চাইছে। কিন্তু পরিবর্তনের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই সরকারের দলের পক্ষ থেকে এমন কথা, সাংবাদিকদের চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার না করতে দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিজেদের অবস্থা পরিষ্কার করে দিয়েছে।
টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ প্রমুখ।
News Courtesy: http://bonikbarta.net